Skip to main content

পড়া মনে রাখার সহজ ও বৈজ্ঞানিক কিছু কৌশল !

মানুষের মস্তিষ্কের দুটি দিক রয়েছে। একটি সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম, অন্যটি পেরিফেরাল নার্ভাস সিস্টেম। সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের আবার অনেক ভাগ। এর সঙ্গে রয়েছে নানা রকম কাজ। তার একটি হলো মেমোরি বা স্মৃতিশক্তি। পৃথিবীতে বেশি আইকিউ নিয়ে কেউ জন্মগ্রহণ করে না।
তাদের ব্যবহারিক আচরণের ওপর নির্ভর করে বুদ্ধিমত্তা বা আইকিউ। যত চর্চা করা যাবে, আইকিউ ততই বাড়বে। সাধারণ আইকিউ ৯০ থেকে ১১০। তবে কারো কারো আইকিউ ১১০-এর ওপরে হতে পারে।
পৃথিবীতে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির আইকিউ ১১০-এর ওপরে। এ আইকিউ বৃদ্ধির জন্য চর্চার বিকল্প নেই। চর্চার মাধ্যমেই একজন ছাত্র সাধারণ থেকে মেধাবী হতে পারে। মনে রাখতে না পারার ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে।

পড়তে বসার আগে ১০ মিনিট হাঁটা:
পড়ার টেবিলে বসার পূর্বে ১০ মিনিট হাঁটলে বা হালকা ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে পড়া মনে রাখতে বেশ সুবিধা হয়। ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, পড়ার পূর্বে ১০ মিনিট হাঁটলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা প্রায় ১০ শতাংশ পরিমাণ বেড়ে যায়। তাহলে একটু হাঁটার পরেই শুরু হোক পড়ালেখা।



পড়া + লেখা = পড়ালেখা :
সারাদিন পড়লেই যে সবকিছু মনে থাকবে এ ধারণা ভুল। যা পড়া হয়েছে তা যদি লেখার অভ্যাস থাকে তবে তা বেশি দিন মনে থাকবে। একারণেই পড়া+লেখা= পড়ালেখা। এতে পরীক্ষার খাতায় লেখার সময় ভুলের সম্ভাবনা কমে যায়। পড়ার পাশাপাশি নিয়মিত লেখার অভ্যাস করলে বাড়ে স্মৃতিশক্তি ও আত্মবিশ্বাস।

পড়ার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করা:
যে বিষয়টি পড়ব তার প্রতি আকর্ষণ জাগাতে হবে। কিংবা আকর্ষণীয় উপায়ে পড়ার চেষ্টা করতে হবে। এতে পড়া সহজে মনে থাকবে।
“চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, মানুষ কোন কিছুর প্রতি আকর্ষণ অনুভব করলে তা সহজেই মস্তিষ্কে মেমরি বা স্মৃতিতে রূপান্তরিত হয়ে যায় এবং তা স্মৃতিতে দীর্ঘস্থায়ী হয়।”
কনসেপ্ট ট্রি ব্যবহার করে পড়া:
পড়া মনে রাখা একটি কৌশল। কোনো একটি পড়া পড়ে নেয়ার পর সাতটি ভাগে ভাগ করতে হয় এবং প্রতিটি ভাগের জন্য এক লাইন করে সারমর্ম লিখতে হয়। ফলে পড়ার বিষয়টি সাতটি লাইনে সীমাবদ্ধ থাকে। এর প্রতিটি লাইন একটি পাতায় লিখে অধ্যায় অনুযায়ী একটি গাছ তৈরি করে গাছের নিচ থেকে ধারাবাহিকভাবে পাতার মতো করে সাজাতে হবে, যাতে এক দৃষ্টিতেই পড়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মনে পড়ে যায়। এ পাতাগুলোয় চোখ বোলালে লেখা সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যাবে। বাংলা, ভূগোল, সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এ কৌশল অধিক কার্যকর।

ছন্দ তৈরি করে মনে রাখা :
ছন্দের আকারে যেকোনো বিষয়ের কঠিন অংশগুলো খুব সহজে মনে রাখা যায়। যেমন-রঙধনুর সাত রঙ মনে রাখার সহজ কৌশল হলো ‘বেনীআসহকলা’ শব্দটি মনে রাখা। প্রতিটি রঙের প্রথম অক্ষর রয়েছে শব্দটিতে।
একইভাবে ত্রিকোণমিতির সূত্র মনে রাখতে ‘সাগরে লবণ আছে, কবরে ভূত আছে, ট্যারা লম্বা ভূত’ ছড়াটি মনে রাখা যেতে পারে। এর অর্থ দাঁড়ায়…
সাইন=লম্ব/অতিভুজ (সাগরে লবণ আছে),
কস=ভূমি/অতিভুজ (কবরে ভূত আছে)
ট্যান=লম্ব/ভূমি (ট্যারা লম্বা ভূত)।
নিজেই নিজের মতো করে নানা রকম ছড়া তৈরি করে নিতে পারো।

কালারিং বা মার্কার পেন ব্যবহার করে দাগিয়ে পড়া:
আমাদের মধ্যে অনেকেই মার্ক করে বা দাগিয়ে পড়ে। এটাও পড়া মনে রাখতে বেশ কার্যকর। মার্ক করার ফলে কোন শব্দ বা বাক্যের প্রতি আকর্ষণ ও আগ্রহ বেড়ে যায়। পাশাপাশি এর উপর ব্রেইনের ভিজ্যুয়ালিটি ইফেক্টও বেড়ে যায় যা পড়াকে মনে রাখতে সহায়তা করে। নানা রঙের হাইলাইটার ব্যবহার করা পড়াশোনায় মন আনতে অনেক সাহায্য করতে পারে

লিখে লিখে বা ছবি এঁকে পড়ার অভ্যাস করা:
কোন জিনিস পড়ার সাথে সাথে লিখলে বা ছবি আঁকলে পড়ার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। কারন নিউরো সায়েন্সের মতে, কিছু লিখলে বা ছবি আঁকলে ব্রেইনের অধিকাংশ জায়গা উদ্দীপিত হয় এবং ছবি বা লেখাটিকে স্থায়ী মেমরিতে রূপান্তরিত করে ফেলে। ফলে পড়াটি মস্তিষ্কতে দীর্ঘস্থায়ী হয়। সাধারণভাবেও বুঝা যায়, বইতে যেসব বিষয় ছবি দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয় তা-ই আমাদের বেশি মনে থাকে। পরীক্ষার সময়ও চোখের সামনে বইয়ের ছবিটিই ভেসে উঠে। তাই লিখে বা ছবি এঁকে পড়া অনেক কার্যকর।

নিমনিক তৈরী করা:
আমাদের ব্রেইন আগোছালো জিনিস মনে রাখতে পারে না। তাই কোন কিছু ছক বা টেবিল আকারে সাজিয়ে নিলে কিংবা কবিতার ছন্দ বানিয়ে পড়লে তা সহজেই মনে রাখা যায়। পড়া মনে রাখার এই কৌশল কে নিমনিক (mnemonic) বলা হয়।

উচ্চস্বরে পড়া :
পড়া মুখস্থ করার সময় শব্দ করে পড়তে হবে। এই পদ্ধতিতে পড়লে কথাগুলো কানে প্রতিফলিত হয়। এতে সহজে পড়া মনে থাকে। কারও কারও ক্ষেত্রে শব্দহীনভাবে পড়ালেখা করলে একসময় পড়ার গতি কমে যায়। পড়া শেখা হলে বারবার তা পুনরাবৃত্তি করতে হবে। এটাও পড়া মনে রাখার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করে। তবে শব্দ করে পড়ার পদ্ধতিতে একটানা কিছুসময় পড়লে শিক্ষার্থীরা দ্রুত কাহিল হয়ে যায়।

বেশি বেশি পড়া ও অনুশীলন করা:
আমাদের ব্রেইন ক্ষণস্থায়ী স্মৃতি গুলোকে তখনই দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে পরিণত করে যখন তা বারবার ইনপুট দেয়া হয়। বারবার ইনপুট দেয়ার ফলে ব্রেইনের স্মৃতি গঠনের স্থানে গাঠনিক পরিবর্তন হয় যা দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি তৈরীতে সাহায্য করে। তাই বেশি বেশি পড়া ও অনুশীলন করা পড়া মনে রাখার অন্যতম উপায়।

পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো:
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রেইন যেকোন ইনফরমেশন বা তথ্যকে মেমরি বা স্মৃতিতে পরিণত করে ঘুমানোর সময়। তাই পড়া মনে রাখার জন্য পড়ালেখার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানোও জরুরি। সাধারণত একজন সুস্থ ব্যক্তির দিনে ৮ ঘন্টার মত ঘুমানো উচিত। এর থেকে কম ঘুমালে পড়া মনে রাখার ক্ষমতা কমে যায়।

শেয়ারিং :
কোনো বিষয় বুঝতে অসুবিধা হলে বন্ধুরা মিলে প্রত্যেকে প্রত্যেকের মতো করে বিষয়টি নিয়ে মনের ভাবগুলো প্রকাশ করতে পার। সবার কথাগুলো একত্র করলে অধ্যায়টি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হবে।

Comments

Popular posts from this blog

একটি আকর্ষণীয় ও স্মার্ট সিভি লেখার কৌশল !

মাত্র অনার্স শেষ করেছেন শাহ্-আলম। এখন চাকরির বাজারে পদার্পনের পালা, তৈরী করতে হবে সিভি বা কারিকুলাম ভিটা, চটজলদি কম্পিউটারের সামনে বসে গেলেন তিনি । কিন্তু বুঝতে পারলেন সিভি লেখা যতটা সহজ মনে করে ছিলেন বাস্তবে ততটা সহজ নয়। তখন চিন্তা করছেন দোকান থেকে ৫ বা ১০ টাকা দিয়ে একটা সি ভি ফরম্যাট কিনে নিলেই চলবে ! মনে রাখবেন, বেশীরভাগ প্রার্থীরা একাজটিই করবে। তার মধ্যে আপনি যদি নিজেকে একটু আলাদা আর একটু স্মার্ট ভাবে উপস্থাপন করতে পারেন তাহলে আপনার চান্সটাই বেশী থাকবে। যেমনঃ অনেক গুলো সাদা টি-শার্ট এর মাঝে একটি লাল টি-শার্ট যেমন চোখে পড়ে। ছোট বেলায় গরু রচনা আমরা সবাই পড়েছি। সেখানে জেনেছি গরুর দুইটি চোখ, দুইটি কান, চারটি পা আছে। বড়বেলায় চাকরি খোঁজার সময় সিভি তৈরি করতে গিয়ে আমরা সেই বিদ্যাটাই যেন একদম ঢেলে দেই। “আমার নাম মোকলেস, হাইট ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি, আমি ছেলে, গায়ের রং শ্যামলা, আমি অবিবাহিত, আমার দুটি বোন,একটি ভাই আছে”, কি ভাই? আপনিও লিখেছেন নাকি এসব? দেখে নিন। দুঃখিত আপনাদের একটু খোঁচা দিয়ে লেখাটা শুরু করার জন্য। শাহ্ -আলমের মত অনেকেই সিভি তৈরী, তার কাঠামো নির্ধারণ, শব্দ

লিওনেল মেসির বিশ্ব সেরা "মেসি" হয়ে উঠার কিছু জানা-অজানা কথা!

ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় যুগে যুগে যেসমস্ত মহান ব্যক্তিরা পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছেন, তাঁদের জীবনের শুরুটা মোটেই সহজ ছিলোনা। অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি ও সীমাবদ্ধতার মধ্যদিয়ে তাঁদেরকে সামনে এগিয়ে চলতে হয়েছে। তেমনি আজকে যাকে নিয়ে আলোচনা করবো তিনি হলেন বর্তমান সময়ের বিশ্ব সেরা ফুটবলার "লিওনেল আন্দ্রেস মেসি" যাকে আমরা মেসি নামেই চিনি।  মেসির এই মেসি হয়ে ওঠার গল্পটি কিন্তু এত মধুর ছিলনা। ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন আর্জেন্টিনার এক শ্রমজীবী পরিবারে জন্মগ্রহন করেন মেসি। তার বাবা একটি স্টিল কারখানায় কাজ করতেন এবং তার মা ছিলেন একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী। শৈশব থেকেই মেসির ফুটবল খেলার ঝোঁক এবং ভিন্নধর্মী খেলার ধরণ সবার দৃষ্টি আকর্ষন করে। কিন্তু মাত্র ১০ বছর বয়সে তাঁর এক প্রকার গ্রোথ হরমোন ডেফিসিয়েন্সি দেখা দেয়। এ রোগের প্রভাবে মানুষের স্বাভাবিক শারীরিক বিকাশ ব্যাহত হয়। চিকিৎসা নিতে প্রতি মাসে প্রায় এক হাজার ডলার প্রয়োজন ছিল, ওই মুহুর্তে মেসির পরিবারের ব্যয়বহুল এ চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য ছিলনা। স্থানীয় একটি ফুটবল ক্লাব, রিভার প্লেট, মেসিকে দলে নিতে আগ্রহী থাকলেও চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন ক