ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় যুগে যুগে যেসমস্ত মহান ব্যক্তিরা পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছেন, তাঁদের জীবনের শুরুটা মোটেই সহজ ছিলোনা। অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি ও সীমাবদ্ধতার মধ্যদিয়ে তাঁদেরকে সামনে এগিয়ে চলতে হয়েছে। তেমনি আজকে যাকে নিয়ে আলোচনা করবো তিনি হলেন বর্তমান সময়ের বিশ্ব সেরা ফুটবলার "লিওনেল আন্দ্রেস মেসি" যাকে আমরা মেসি নামেই চিনি।
মেসির এই মেসি হয়ে ওঠার গল্পটি কিন্তু এত মধুর ছিলনা। ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন আর্জেন্টিনার এক শ্রমজীবী পরিবারে জন্মগ্রহন করেন মেসি।
তার বাবা একটি স্টিল কারখানায় কাজ করতেন এবং তার মা ছিলেন একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী। শৈশব থেকেই মেসির ফুটবল খেলার ঝোঁক এবং ভিন্নধর্মী খেলার ধরণ সবার দৃষ্টি আকর্ষন করে। কিন্তু মাত্র ১০ বছর বয়সে তাঁর এক প্রকার গ্রোথ হরমোন ডেফিসিয়েন্সি দেখা দেয়। এ রোগের প্রভাবে মানুষের স্বাভাবিক শারীরিক বিকাশ ব্যাহত হয়। চিকিৎসা নিতে প্রতি মাসে প্রায় এক হাজার ডলার প্রয়োজন ছিল, ওই মুহুর্তে মেসির পরিবারের ব্যয়বহুল এ চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য ছিলনা। স্থানীয় একটি ফুটবল ক্লাব, রিভার প্লেট, মেসিকে দলে নিতে আগ্রহী থাকলেও চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে সম্মত ছিলনা। এরই মধ্যে মেসি স্পেনের ফুটবল ক্লাব বার্সেলনায় পরীক্ষা দিয়ে শুধু উত্তীর্ণ হন তাই নয় বরং কোচ কার্লস রেক্সাচের মন জয় করে নেন।
ট্রায়ালে তাঁকে দেখে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা তাঁর সাথে চুক্তি করে এবং
তাঁর চিকিৎসার ভার নেয়। চুক্তিপত্রটি ছিল কাগজের ন্যাপকিনের। সেটাতেই
স্বাক্ষর করেছিলেন আজকের
কিংবদন্তি ফুটবলার লিওনেল মেসি। এটি ছিল বার্সেলনার সাথে তো বটেই এমনকি
জীবনের প্রথম কোন ফুটবল ক্লাবের সাথে চুক্তি। তখন বয়স ছিল ১১। এরই ধারাবাহিকতায় মেসি বার্সেলনার সাথে
চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করে বাবার সাথে পাড়ি জমান সুদূর বার্সেলনায় এবং অচিরেই
তিনি হয়ে ওঠেন মর্যাদাপূর্ণ এফসি বার্সেলনা তরুন একাডেমীর অপরিহার্য অংশ।
পরের ইতিহাস কারো অজানা নয়!
মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধান এর মধ্যেই ভেঙেছেন ফুটবল দুনিয়ার প্রায় সকল
রেকর্ড, নিজের করে নিয়েছেন ফিফার পাঁচ পাঁচটি ব্যালন ডি’অর। নিজেই রেকর্ড
সৃষ্টি করেছেন আবার নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙেছেন। ২০১২ সালে জার্মান ফুটবলার
গার্ড মুলারের এক বছরে ৮৫টি গোলের রেকর্ড ভেঙে মেসি ৯১টি গোলের অবিশ্বাস্য
রেকর্ড সৃষ্টি করেন। “আমার করা একবছরে ৮৫টি গোলের রেকর্ড টিকে ছিল প্রায়
৪০ বছর-এখন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় এই রেকর্ড ভেঙেছে এবং অবশ্যই আমি তার
জন্য আনন্দিত। সে অবিশ্বাস্য একজন খেলোয়াড়, অতিমানবীয়”- মেসিকে নিয়ে এভাবেই
নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন মুলার।
মেসি তার স্বরূপ চিনিয়েছেন অনেক আগেই তবে বিশ্ববাসীর সামনে বিস্ময় হয়ে দেখা দিতে শুরু করেন ২০০৪/০৫ মৌসুমে। এই মৌসুমে মেসি সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে লিগে গোল করে তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে। ২০০৬ সালে মেসি একই মৌসুমে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী টিমের গুরুত্বপূর্ন সদস্য ছিলেন। পরবর্তী মৌসুমেই (২০০৬-০৭) মাত্র ২০বছর বয়সে মেসি বার্সেলনার হয়ে লিগে ২৬ ম্যাচে ১৪ গোল করে স্ট্রাইকার হিসেবে বার্সেলনার প্রথম পছন্দ হয়ে ওঠেন ।
এরপরেই ২০০৯-১০ মৌসুমে ৪৭টি গোল করে স্পর্শ করেন রোনাল্ডকে। এরপর শুধুই রেকর্ড ভাঙার গল্প। ২০১২সালে সর্বকালের সব রেকর্ড ভেঙে সকল রেকর্ড নিজের করে নেন একবছরে ৯১টি গোল করার মাধ্যমে। ২০১৩ সালের শুরু পর্যন্ত মেসি ক্লাব ফুটবলে ২৯২ টি ও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ৩১টি গোল করেন। ইতোমধ্যে সকল নামকরা ফুটবল ক্লাবের লক্ষ্যে পরিনত হলেও মেসি ২০১২সালে বিশ্বের অন্যতম দামি ফুটবলার হিসেবে বার্সেলনার সাথে ২০১৮সাল পর্যন্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে যাওয়ার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মেসি বার্সেলনার সাথে তার অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করেন বলেন “বার্সেলনা আমার জীবন। আজ আমি যেখানে পৌঁছেছি সেখানে তারাই আমাকে নিয়ে এসেছে। আমি তাদের ছাড়তে পারবনা এবং ছাড়তেও চাইনা। যদিও আমি জানি প্রিমিয়ার লিগ খুব ভাল কিন্তু আমি আমাকে ইংল্যান্ডে খেলতে দেখতে পারবনা কারণ আমার হৃদয় সবসময় বার্সেলনার সাথে”। শুধু তাই নয় মেসির এ বিনয় আবারো প্রকাশ পায় যখন তিনি শুধুমাত্র মাতৃভূমির হয়ে খেলবেন বলে স্পেনের অনুর্ধ ২০-এ খেলার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে যাওয়ার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মেসি বার্সেলনার সাথে তার অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করেন বলেন “বার্সেলনা আমার জীবন। আজ আমি যেখানে পৌঁছেছি সেখানে তারাই আমাকে নিয়ে এসেছে। আমি তাদের ছাড়তে পারবনা এবং ছাড়তেও চাইনা। যদিও আমি জানি প্রিমিয়ার লিগ খুব ভাল কিন্তু আমি আমাকে ইংল্যান্ডে খেলতে দেখতে পারবনা কারণ আমার হৃদয় সবসময় বার্সেলনার সাথে”। শুধু তাই নয় মেসির এ বিনয় আবারো প্রকাশ পায় যখন তিনি শুধুমাত্র মাতৃভূমির হয়ে খেলবেন বলে স্পেনের অনুর্ধ ২০-এ খেলার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।
আর এই বিনয়ের কারনেই হয়তো মেসির শ্রেষ্ঠত্বের বর্ণনা দিতে কার্পন্য করেননি কোন কিংবদন্তী ফুটবলার। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো বলেছেন “মেসির তার নিজের মত ব্যক্তিত্ব রয়েছে আর আমার আছে আমার মত। ওর যেমন নিজের খেলা আছে তেমনি আমারো আছে। আমিও ওর মতো বড় একটি ক্লাবে খেলছি। আসলে আমরা সব দিক দিয়েই ভিন্ন। তবে এখন পর্যন্ত ওই সেরা”। একইভাবে ফুটবল কিংবদন্তী ম্যারাডোনা বলেছেন “আমার ক্যারিয়ারে আমি অনেক বড় মাপের ফুটবলার দেখেছি। কিন্তু মেসির মত বল নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা আজও কারো দেখিনি”।
ব্যক্তিজীবনে এক পুত্রের পিতা মেসি যে শুধু খেলা নিয়েই ব্যস্ত তা নয় বরং নিজের অবস্থানের সামাজিক দায়বদ্ধতা উপলব্ধি করেই মেসি ইউনিসেফ এর শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়াও শিশুদের শিক্ষা ও খেলাধুলার সুযোগ সৃষ্টি করতে চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের দাতব্য সংস্থা, অবদান রাখছেন আর্জেন্টিনার চিকিৎসা ক্ষেত্রেও।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এ সর্বোচ্চ গোলদাতার খাতায় মান উঠলেও রয়ে গেছে বিশাল এক অতৃপ্তি, এখনো মেসি স্বাদ পাননি বিশ্বকাপ ট্রফির। আর তাই বলায় যায়, মেসি সাফল্যের শিখরে অবস্থান করলেও বিশ্বকাপ ট্রফিই হবে মেসির মুকুটে বিশালতার শ্রেষ্ঠ চিহ্ন। এখন অপেক্ষা মাত্র কয়েকটি দিনের, দেখা যাক এই বিশ্বকাপেই সেই সেরা মুহুর্তের দেখা বিশ্ববাসী পান কিনা।
লিওনেল মেসির সংক্ষিপ্ত ক্যারিয়ার:
ব্যক্তিজীবনে এক পুত্রের পিতা মেসি যে শুধু খেলা নিয়েই ব্যস্ত তা নয় বরং নিজের অবস্থানের সামাজিক দায়বদ্ধতা উপলব্ধি করেই মেসি ইউনিসেফ এর শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়াও শিশুদের শিক্ষা ও খেলাধুলার সুযোগ সৃষ্টি করতে চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের দাতব্য সংস্থা, অবদান রাখছেন আর্জেন্টিনার চিকিৎসা ক্ষেত্রেও।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এ সর্বোচ্চ গোলদাতার খাতায় মান উঠলেও রয়ে গেছে বিশাল এক অতৃপ্তি, এখনো মেসি স্বাদ পাননি বিশ্বকাপ ট্রফির। আর তাই বলায় যায়, মেসি সাফল্যের শিখরে অবস্থান করলেও বিশ্বকাপ ট্রফিই হবে মেসির মুকুটে বিশালতার শ্রেষ্ঠ চিহ্ন। এখন অপেক্ষা মাত্র কয়েকটি দিনের, দেখা যাক এই বিশ্বকাপেই সেই সেরা মুহুর্তের দেখা বিশ্ববাসী পান কিনা।
লিওনেল মেসির সংক্ষিপ্ত ক্যারিয়ার:
নামঃ লিওনেল আন্দ্রেস মেসি
জন্মঃ ২৪জুন ১৯৮৭
জন্মস্থানঃ রোসারিও, আর্জেন্টিনা
উচ্চতাঃ ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি
খেলার অবস্থানঃ ফরোয়ার্ড
জন্মঃ ২৪জুন ১৯৮৭
জন্মস্থানঃ রোসারিও, আর্জেন্টিনা
উচ্চতাঃ ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি
খেলার অবস্থানঃ ফরোয়ার্ড
অর্জন: অলিম্পিক গোল্ড মেডেল ২০০৮, ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ ২০১১, ফিফা ব্যালন ডি’অর ২০০৯, ২০১০, ২০১১,২০১২, ২০১৫। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা ৩ বার, লা লিগা প্লেয়ার অফ দ্যা ইয়ার ২০০৯,১০,১১।
রেকর্ড: অফিশিয়াল ম্যাচে সবচেয়ে বেশি হ্যাটট্রিক ২৬ টি, লা লিগায় সবেচেয়ে বেশি হ্যাটট্রিক ১৯ টি। এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোল ৯১টি। জাতীয় দলের হয়ে এক বছরে সবচেয়ে বেশি গোল ১২ , লা লিগায় এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি হ্যাটট্রিক ৮ টি। এক ক্লাবের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল ৫০৭*
গোল: আর্জেন্টিনার হয়ে ৮৩ ম্যাচে ৩৭ গোল।
আর্জেন্টিনার হয়ে অর্জন: ফিফা অনূর্ধ্ব ২০ বিশ্বকাপ শিরোপা, অলিম্পিক গোল্ড মেডেল ২০০৮, কোপা আমেরিকা রানার আপ ২০০৭
Comments
Post a Comment